Monday, January 30, 2017

কানের রোগ থেকে বাঁচার উপায়। #DrShahbubAlamTips

নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ সম্পর্কে সচেতন থাকা :

নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ কানের জন্য ক্ষতিকর। এই ওষুধ ব্যবহারে অন্তঃকর্ণের কিছু সংবেদনশীল অংশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে, ফলে শ্রবণশক্তি হ্রাস পায়। এ ধরনের ওষুধ হল- Gentamycin, Streptomycin, Frusemide, Chloroquine এবং Aspirin। এসব ওষুধ অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করা উচিত।
নিয়মিত শ্রবণশক্তি পরীক্ষা করা :
কেউ যদি নিয়মিত উচ্চ শব্দ বা কোলাহলপূর্ণ এলাকায় অবস্থান করেন তাহলে অবশ্যই তার কানের বার্ষিক পরীক্ষা করানো উচিত।

শব্দ দূষণ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করুনঃ

আমাদের কান একটি নির্দিষ্ট মাত্রার ওপরের শব্দের প্রতি সংবেদনশীল। শব্দের মাত্রা গ্রহণের জন্য ককলিয়ার স্ক্যালা মিডিয়ায় বিশেষ স্থান রয়েছে। স্থানগুলো হচ্ছে উচ্চমাত্রা গ্রহণের জন্য ফেনেস্ট্রা রোটান্ডা-সংলগ্ন অংশ, মধ্যমমাত্রা গ্রহণের জন্য মাঝামাঝি অংশ এবং নিম্নমাত্রা গ্রহণের জন্য শীর্ষের কাছাকাছি অংশ।
আমাদের কানের শ্রাব্যতার একটি মাত্রা আছে। অর্থাৎ কেউ যদি ক্রমাগত এ মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রায় শব্দ শুনতে থাকে তাহলে একপর্যায়ে আংশিক; পরবর্তীতে স্থায়ীভাবে কানের শ্রবণশক্তি লোপ পেতে পারে। দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে কান ঝালাপালা করে দেওয়া ভুভুজেলার কথা মনে আছে? ভুভুজেলা থেকে নিঃসৃত শব্দের মাত্রা প্রায় ১২৯ ডেসিবেল পর্যন্ত হতে পারে বলে বিশ্বকাপের সময় ভুভুজেলা নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে আসছিল বিভিন্ন সংগঠন।
ঢাকা শহরে শব্দদূষণের মাত্রা ভয়াবহ। নির্মাণাধীন ভবন, যানবাহনের আওয়াজ, উচ্চমাত্রায় দোকানে বা মার্কেটে গান বাজানো, সভা-সমিতিতে মাইকের আওয়াজ ইত্যাদি কারণেই উচ্চমাত্রার শব্দ প্রতিনিয়ত নিঃসৃত হচ্ছে। তবে শব্দদূষণের কারণে শ্রবণ সমস্যায় বেশি ভোগেন রাস্তায় অবস্থান করা ট্রাফিক পুলিশ, দোকানদার প্রভৃতি পেশার লোক। ট্রাফিক জ্যামে আটকে থাকা শিশুসহ বয়স্ক মানুষও শব্দদূষণের শিকার হন নিমর্মভাবে। অথচ শব্দদূষণ প্রতিরোধ করা খুব কঠিন কাজ নয়। এ জন্য নিজে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি আশপাশের মানুষকেও সচেতন করে তোলা প্রয়োজন।
অন্য যেকোনো ইন্দ্রিয়ের মতোই কানের যত্নে আমাদের সবারই অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত; নতুবা এক মুহূর্তের অসাবধানতার কারণে বরণ করে নিতে হতে পারে শব্দহীন এক পৃথিবীকে।

তথ্যসূত্রঃ উপরের তথ্যগুলো ইন্টারনেটের বিভিন্ন তথ্যসূত্র যেমনঃ নিউজপেপার, ব্লগ ইত্যাদি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে । তাই উপরের লেখা গুলোর প্রকৃত লেখকদেরকে কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।

কানঃ সাধারণ অঙ্গটি নিয়ে অসাধারণ যতকথা। পার্টঃ ৫। #DrShahbubAlamTips

কানে কম শোনা ও বধিরতার আধুনিক কারণঃ

বিশ্বায়নের এ যুগে প্রযুক্তির সহজলভ্যতার কারণে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে উচ্চ ভলিউমে গান শোনা, ফোনে একটানা দীর্ঘ সময় কথা বলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কনসার্ট, হাইড্রোলিক হর্নের ব্যাপকতা, মিছিল-মিটিংয়ের নামে মাইক্রোফোনের যথেচ্ছ ব্যবহার আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে; এটি কানে সামান্য কম শোনা থেকে শুরু করে স্থায়ী বধিরতার কারণ হিসেবে দেখা দিচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বের প্রয় ১১০ কোটি যুবক-যুবতী শ্রবণশক্তি বিনষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সের প্রায় ৪ কোটি ৩০ লাখ লোক মারাত্মক বধিরতায় আক্রান্ত। স্বল্পোন্নত ও উন্নত বিশ্বের ১২ থেকে ৩৫ বছর বয়সের জনগণের শতকরা প্রায় ৫০ ভাগই তাদের ব্যক্তিগত গান শোনার যন্ত্রে (এমপিথ্রি প্লেয়ার, স্মার্টফোন) অনিরাপদ মাত্রার শব্দ শুনে থাকে। এই যুবাদের শতকরা প্রায় ৪০ ভাগ কনসার্ট, খেলার মাঠ, বার, নাইট ক্লাবে ক্ষতিকর মাত্রার উচ্চ শব্দযুক্ত কোলাহলপূর্ণ স্থানে সময় কাটায়। যা কানে কম শোনা বা বধিরতার অন্যতম কারণ। সুতরাং এমন কোনো গান এবং এমন কোনো কাজ করা উচিত নয়, যা পৃথিবীর যাবতীয় মধুর শব্দ শোনা থেকে আমাদের বঞ্চিত করে। মনে রাখবেন, এটি কোন পোর্টেবল ডিভাইস নয় যে একটায় সমস্যা দেখা দিলে নতুন একটা কিনে লাগাবেন।

বধিরতা রোধের উপায়ঃ

উচ্চ ভলিউমে গান শোনা থেকে বিরত থাকা : দীর্ঘ সময় উচ্চ ভলিউমে গান শোনা শ্রবণশক্তি কমিয়ে দেয়। হেডফোনে গান শোনার সময় বিরতি দিয়ে এবং ভলিউম কমিয়ে গান শোনা উচিত।
কোলাহলপূর্ণ (উচ্চ শব্দযুক্ত) স্থানে দীর্ঘ সময় না থাকা : এক হাত ব্যবধানে বসা দু’জন ব্যক্তির কথোপকথনের সময় যদি স্বাভাবিকের চেয়ে উচ্চস্বরে বা জোরে কথা বলতে হয় তখনই বুঝতে হবে ওই স্থান কোলাহলপূর্ণ বা শব্দ মাত্রাতিরিক্ত। ওই স্থান ত্যাগ করার পরও যদি আপনার কানে শোঁ শোঁ শব্দ অনুভূত হয় অথবা কানে কম শোনেন তখন বুঝতে হবে ওই স্থানটি মাত্রাতিরিক্ত কোলাহলপূর্ণ।

বধিরতার সতর্ক সংকেত সম্পর্কে সচেতন থাকা : বধিরতার সতর্ক সংকেত হল- কোলাহলপূর্ণ স্থান ত্যাগের পর কানে শোঁ শোঁ শব্দ হওয়া, জোরালো শব্দ কম শোনা, ফোনে কথা শুনতে অসুবিধা হওয়া। এর যে কোনোটি থাকলে অতি শিগগির নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

কানের সমস্যাগুলো মূলত যে কারনে হয়। #DrShahbubAlamTips

কানের সমস্যাগুলো হয়ঃ
-কানে ময়লা জমলে ।
-বহিঃকর্ণে কোনো বস্তু আটকে গেলে ।
-মধ্যঃকর্ণে কফ জমে গেলে ।
-কানের পর্দা ফেটে গেলে ।
-কানে প্রদাহের সৃষ্টি হলে ।
-মধ্যঃকর্ণের অস্থিগুলো নড়াচড়া না করলে ।
- অন্তঃকর্ণের চাপ বৃদ্ধি পেলে ।
-শ্রবণ-সংক্রান্ত স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলে কানের জন্য ক্ষতিকর ওষুধ দীর্ঘদিন খেলে ।

Sunday, January 29, 2017

"কানের পর্দা ফাটা|"। এর কারন, লক্ষণ এবং সমাধান। #DrShahbubAlamTips

কানের পর্দা ফাটাঃ

কানের ভেতরের দিকে একটি পর্দার মতো থাকে, যা টিমপ্যানিক মেমব্রেন নামে পরিচিত। মধ্যকর্ণ থেকে অন্তঃকর্ণের মাঝখানে এটি পর্দার হিসেবে থাকে। এটি খুবই স্পর্শকাতর, শব্দতরঙ্গ কানের পর্দায় কম্পন তৈরি করে। এই কম্পন মধ্যকর্ণের ছোট ছোট হাড়ের মাধ্যমে অন্তঃকর্ণে পৌঁছায়। অতঃপর অন্তঃকর্ণ থেকে মস্তিষ্কে পৌঁছায়। এভাবে আমরা শুনতে পাই।
কিন্তু বহু কারণে এই পর্দা ফেটে যেতে পারে, ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, ছিঁড়ে যেতে পারে। এতে শুনতে অসুবিধা হয়, কখনো কখনো শ্রবণশক্তি পুরোপুরি লোপ পায়। কানের পর্দা ফেটে গেলে বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে মধ্যকর্ণে ইনফেকশন হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।

পর্দা ফাটার কারণ কি ?

কানের পর্দা বিভিন্ন কারণে ফাটতে পারে বা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যেমন-
* কানের কোনো অসুখ যেমন-মধ্যকর্ণে ক্রনিক সাপোরেটিভ অটাইটিস মিডিয়া হলে ।
* কোনো কিছু দিয়ে কান খোঁচালে। যেমন-কটক বাড।
* কানে কোনো কিছু প্রবেশ করলে এবং অদক্ষ হাতে তা বের করার চেষ্টা করলে।
* দুর্ঘটনা বা আঘাতে কান ক্ষতিগ্রস্ত হলে ।
* হঠাৎ কানে বাতাসের চাপ বেড়ে গেলে। যেমন-থাপ্পড় মারা, বোমা বিস্ফোরণ, অতি উচ্চ শব্দের শব্দ ইত্যাদি কারণে ।
* পানিতে ডাইভিং বা সাঁতার কাটার সময় হঠাৎ পানির বাড়তি চাপের কারণে পর্দায় চাপ পড়লে ।
* কানের অন্য অপারেশনের সময়ও কানের পর্দা ক্ষতিগ্রস্ত হলে ।
* যাদের কানের পর্দা আগে থেকেই দুর্বল বা ক্ষতিগ্রস্ত, তাদের ক্ষেত্রে নাক চেপে কানে বাতাস দিয়ে চাপ দিলে ।

লক্ষণ কি ?

* প্রথমে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়, যা পরবর্তী সময়ে কমে আসে ।
* কান দিয়ে রক্ত পড়া। বিশেষ করে আঘাতজনিত কারণে কানের পর্দা ফেটে গেলে কান দিয়ে রক্ত পড়তে পারে ।
* কানে কম শোনা ।
* মাথা ঘোরানো বা ভার্টিগো ।
* কানে শোঁ শোঁ বা ভোঁ ভোঁ শব্দ (টিনিটাস) হওয়া ।

কি কি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে ?

অটোস্কোপের মাধ্যমে খালি চোখেই ডাক্তার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কানের পর্দা ফেটে গেছে কি না তা নির্ণয় করতে পারেন। এ ছাড়া কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষারও প্রয়োজন হতে পারে। এর মধ্যে আছে কানের ভেতর থেকে বের হওয়া তরলের কালচার পরীক্ষা, টিউনিং ফর্ক এভালুয়েশন, টিমপ্যানোমেট্রি। এগুলো থেকেও যথাযথ রোগ নির্ণয় না করা গেলে অডিওলজি টেস্ট করা হয়।

এর চিকিৎসা কি ?

অনেকেই কানে কোনো সমস্যা হলে নিজেরাই কানের ড্রপ ব্যবহার করে, যা উচিত নয়। কানের পর্দা ফেটে গেলে অবশ্যই একজন নাক-কান-গলা রোগ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও পরামর্শ নেওয়া উচিত। যাদের কানে আগে থেকেই কোনো সমস্যা আছে বা কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার ইতিহাস আছে, তাদের নিচের পরামর্শগুলো মেনে চলা উচিত।
* কানে কোনোভাবেই যেন পানি প্রবেশ না করে এ জন্য গোসলের সময় কানে তুলা বা ইয়ার প্লাগ ব্যবহার করা
* সাঁতার না কাটা
* উড়োজাহাজে ভ্রমণ এড়িয়ে চলা
* উচ্চ শব্দে গান না শোনা, হেড ফোন ব্যবহার না করা
* কানে যাতে কোনো ইনফেকশন না হয়, এ জন্য কানো কোনো অসুবিধা হওয়ামাত্র ডাক্তার দেখিয়ে উপযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করা
* কান না খোঁচানো
* নিজে নিজে কোনো ওষুধ দেওয়া থেকে বিরত থাকা
* কানে কোনো কিছু গেলে বা আটকে থাকলে নিজে তা বের করার চেষ্টা না করা।
কানের পর্দার ছিদ্র যদি ছোট হয় বা অল্প একটু ফেটে যায়, তাহলে কয়েক সপ্তাহ পর আপনা আপনি তা ঠিক হয়ে যায়। অনেক সময় কানে ইনফেকশন সন্দেহ করা হলে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করতে হয়, কানে অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ দিতে হয়।
যদি তিন মাসের মধ্যেও ক্ষতিগ্রস্ত পর্দা ঠিক না হয়, সে ক্ষেত্রে প্রয়োজনে অপারেশনের মাধ্যমে কানের পর্দা ঠিক করা যায়।
এ ধরনের অপারেশনের মধ্যে আছে মাইরিংগোপ্লাস্টি। এটি কানের পর্দা জোড়া লাগানোর আধুনিক মাইক্রোস্কোপিক অপারেশন, যা আগে দেশে খুব বেশি হতো না। এখন সরকারি ও বিভিন্ন বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এ অপারেশন অনেক হচ্ছে।

দেরি করলে কি কি জটিলতা হতে পারে ?

যথাসময়ে কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার চিকিৎসা না হলে শ্রবণশক্তি হ্রাস পেতে পারে। এ ছাড়া মধ্যকর্ণে ঘন ঘন ইনফেকশন হয়ে স্থায়ীভাবে শ্রবণশক্তি বিলোপ হতে পারে। এ ছাড়া মধ্যকর্ণে সিস্ট (কোলেস্টিটোমা) হতে পারে।

কানঃ সাধারণ অঙ্গটি নিয়ে অসাধারণ যতকথা। পার্টঃ ৪। #DrShahbubAlamTips

কানের সাধারণ সমস্যা ও তার প্রতিকারঃ

কানের সাধারণ সমস্যাগুলোর কারণ ও প্রতিকার জানা থাকলে খুব সহজেই এগুলো থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। নিম্নে কানের কিছু সাধারণ সমস্যা ও তার প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করা হলঃ-

১/ বহিঃকর্ণের প্রদাহ ও তার প্রতিকারঃ

কানের অন্যতম সাধারণ সমস্যা হলো বহিঃকর্ণে প্রদাহের সৃষ্টি হওয়া। যেকোনো বয়সেই এ সমস্যার উদ্ভব হতে পারে; তবে বাচ্চাদের এ সমস্যা বেশি হয়। মূলত কানে ময়লা জমে যাওয়া এবং সেটা নিয়মিত পরিষ্কার না করা হলে বহিঃকর্ণে প্রদাহ দেখা দেয়। কানের খৈল বা ওয়াক্সের সঙ্গে ধুলাবালি জমেও প্রদাহের সৃষ্টি হতে পারে। ময়লা পরিষ্কার করার জন্য অনেকেই কটনবাড ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু কটনবাডে লেগে থাকা ময়লা কানে প্রবেশ করেও কানে ইনফেকশন দেখা দিতে পারে। এ জন্য কটনবাডের পরিবর্তে অলিভ অয়েল ব্যবহার করে খৈল নরম করে নেওয়াই শ্রেয়। এতে কানের ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে।

২/ কান পাকা রোগ ও তার প্রতিকারঃ
 
বিভিন্ন কারণে কান পাকা বা কান পঁচা রোগ দেখা দিতে পারে। দুই ধরনের কান পঁচা রোগ আছে। একটি তুলনামূলক কম বিপজ্জনক, আরেকটি বেশি বিপজ্জনক। বেশি বিপজ্জনক কান পাকা রোগ দীর্ঘমেয়াদে আরো বড় সমস্যা করে এবং এ থেকে কখনো কখনো মৃত্যু ঘটাও অস্বাভাবিক নয়। পানি বা অন্য কিছুর কারণে কানের পর্দা ছিদ্র হয়ে গেলে কান পচা রোগ দেখা দেয়। এ ছাড়া আমাদের কানের ভেতরে অবস্থিত ছোট ছোট হাড় আছে। সেগুলো ক্ষয় হয়ে গেলেও এ সমস্যা হতে পারে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় মধ্যকর্ণে কলেস্টিটোমার উপস্থিতির কারণে। এটি এক ধরনের ক্ষতিকর অবাঞ্ছিত পাতলা আবরণ, যা মধ্যকর্ণে সৃষ্টি হয় এবং বাড়তে বাড়তে একসময় মস্তিষ্ক পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করে এবং পরবর্তী সময়ে রোগীর মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু ঠিক সময়ে অপারেশনের মাধ্যমে শ্রবণশক্তি ৭০-৮০ শতাংশ পর্যন্ত ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এ ছাড়া কম বিপজ্জনক কান পঁচা রোগ (কলেস্টিটোমার উপস্থিতি ব্যতীত) বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ওষুধের মাধ্যমে নিরাময় করা সম্ভব। বাংলাদেশে সব ধরণের কান পচা রোগের চিকিৎসা করা হয়; দেশের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। এ কারণে কানে কম শুনতে পেলে বা কান দিয়ে দুর্গন্ধ বের হলে সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত, কোনোভাবেই বিলম্ব করা ঠিক নয়।

৩/ ওটোস্ক্লেরেসিস ও তার প্রতিকারঃ
 
ওটোস্ক্লেরেসিস সমস্যাটা কম বয়সী মেয়েদের মধ্যে দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে কানের অভ্যন্তরে যে ছোট ছোট হাড় আছে, সেগুলোর জয়েন্ট শক্ত হয়ে যায়, নড়তে পারে না। ফলে শব্দ আর অন্তঃকর্ণ পর্যন্ত যেতে পারে না, তাই শুনতে সমস্যা হয়। এক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

৪/ শ্রবণশক্তি লোপ ও তার প্রতিকারঃ
 
কানের অভ্যন্তরে হিয়ারিং সেল নষ্ট হয়ে গেলে শ্রবণক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এটি বার্ধক্যজনিত কারণে হয়। কানে সঠিকভাবে শুনতে পাচ্ছেন কি না তা বোঝার জন্য নিজে নিজেই কয়েকটি পরীক্ষা করতে পারেন। এই যেমন, সবার সঙ্গে টিভিতে কোনো অনুষ্ঠান দেখতে বসে বারবার টিভির ভলিউম বাড়িয়ে দিতে বলছেন কি না কিংবা মিটিংয়ে একটু পেছনে বসে বক্তার আওয়াজ আপনার কানে ঠিকমতো এসে পেঁৗছাচ্ছে কি না ইত্যাদি। এভাবে নিজেই কানের অবস্থা সম্পর্কে সজাগ থাকতে পারবেন। সমস্যা শুরু হবার আগেই বুঝতে পারবেন।
শ্রবণশক্তি হ্রাস পেলে তা পুনরুদ্ধারের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের হিয়ারিং অ্যাইড (শ্রবণসহায়ক যন্ত্র) সফলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

৫/ কানের খৈল সমস্যা ও তার প্রতিকারঃ
 
কানে খৈল অতি পরিচিত সমস্যা। এ খৈল অনেকেই পরিষ্কার করার চেষ্টা করেন। নিজে এটি পরিষ্কার করা ঠিক নয়। নিজে পরিষ্কার করতে গেলে জমে থাকা খৈলের বেশীরভাগই ভেতরে চলে যায়। ফলে বিপত্তি আরো বাড়ে। কানে খৈল আটকে গেলে কানে ব্যথা হয়, কানে কম শোনা যায় কান বন্ধ থাকার কারণে ইএনটি স্পেশালিস্ট কান দেখে এটি পরিষ্কার করে দিতে পারেন। তবে পরিষ্কার করা সম্ভব না হলে খৈল গলানোর ওষুধ রয়েছে। তাতেও কাজ না হলে কিংবা অবস্থা বেশি খারাপ হলে অজ্ঞান করে কান পরিষ্কার করে দিতে হয়। যাদের কানে খোল হওয়ার প্রবণতা রয়েছে তারা নিয়মিত কানে ৪/৫ ফোঁটা করে অলিভ অয়েল দিতে পারেন।
 
 চলবে.....................

কানঃ সাধারণ অঙ্গটি নিয়ে অসাধারণ যতকথা। পার্টঃ ৩। #DrShahbubAlamTips

কানের প্রদাহ প্রতিরোধের উপায়ঃ

একটু সচেতন হলেই কানের সকল প্রকার সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। কানের সমস্যা প্রতিরোধে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো অবশ্যই মেনে চলা উচিতঃ-

কান খোঁচানো থেকে বিরত থাকুন।

আমরা অনেক সময় কান চুলকানোর জন্য হাতের কাছে যা পাই তা দিয়েই কান খোঁচানো শুরু করি। পেন্সিল, ক্লিপ,কাঠিসহ নানান বস্তু ব্যবহার করি; যা মোটেই উচিত নয় । যদি খুব প্রয়োজন হয়, তাহলে কটন বাড ব্যবহার করুন। তবে খুব সতর্কতার সাথে এটি ব্যবহার করতে হবে। কটন বাড একটু তেল দিয়ে ভিজিয়ে বা আদ্র করে ব্যবহার করবেন। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে কানের ময়লা এমনিতেই পরিস্কার হয় যায়। খুব বেশি কটন বাড ব্যবহার করাও কানের জন্য ক্ষতিকর।

কানের ছিদ্রের বেশি গভীরে কোন কিছু প্রবেশ করানো থেকে বিরত থাকুন
কান পরিষ্কারের সময় বাইরের দিকটা ভালোভাবে পরিষ্কার করুন। যা দিয়েই কান পরিষ্কার করুন না কেন, সেটাকে কানের খুব বেশি ভেতরের দিকে ঢুকাবেন না। এতে কানে আঘাত পাওয়ার ঝুঁকি থাকে। কান পরিষ্কারের সময় খুব সতর্ক থাকা উচিত। খুব আলতোভাবে কাজটি করতে হবে।

ব্যক্তিগত হেডফোন অন্যের সাথে শেয়ার করবেন না।

হোক আপনার খুব আপন লোক, হেডফোনটা কিন্তু না শেয়ার করাই ভালো। তার কানে তো ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থাকতেই পারে, তাই নয় কী! হেডফোনের সাথে সাথে সেই ব্যাকটেরিয়াও কিন্তু তখন শেয়ার হয়ে যেতে পারে। তখন আপনিও সেই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। সো বি কেয়ারফুল!


উচ্চ শব্দে গান শোনা থেকে বিরত থাকুন।
অতিরিক্ত কোন জিনিস কবেই বা আর ভাল ছিল! অধিক সময় ধরে গান শোনা কানের জন্য মোটেই ভাল ব্যপার নয়। আর জোরালো কণ্ঠে গান শোনাটা তো আরে বেশি বিপজ্জনক। বিশিষ্ট নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞদের মতে, টানা দুই ঘণ্টার বেশি খুব জোরালো আওয়াজে গান শোনা ঠিক নয়। এতে কানের ক্ষতি হয়।
এ ছাড়া কান ভালো রাখতে খুব জোরে আওয়াজ হয়, এরকম জায়গা থেকেও নিজেকে সরিয়ে রাখাই ভালো।

চলবে...........................

কানঃ সাধারণ অঙ্গটি নিয়ে অসাধারণ যতকথা। পার্টঃ ২। #DrShahbubAlamTips

কান পরিষ্কারে তেলের ব্যবহারঃ

রাতে শোবার আগে কানে কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল বা জলপাইয়ের তেল ব্যাবহার করতে পারেন। এতে ময়লা গুলো নরম হয়ে যাবে। ফলে কান পরিষ্কার করতে সুবিধা হবে।

জলপাই তেল ব্যবহারের নিয়মঃ
প্রতি কানে ৮-১০ ফোঁটা জলপাই তেল দিতে হবে৷
* কানে তেল দেওয়ার পরে সেটি ফেরত আসলে বাইরে থেকে তুলা দিয়ে মুছে দিতে হবে৷
* একই সঙ্গে দুই কানে জলপাই তেল ব্যবহারেও কোনো সমস্যা নেই৷

কটন বাডের ব্যবহারঃ
 
অনেকেই কান পরিষ্কার করতে কটন বাড ব্যবহার করে থাকেন। এর যথাযথ ব্যবহারে কান পরিষ্কারের কাজটি ভালোভাবে সম্ভব মনে হলেও এর কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে। কটন বাড ব্যবহারকারীদের প্রাকৃতিকভাবে কান পরিষ্কার হওয়ার পদ্ধতিটি বাধাগ্রস্ত হয়৷ কানে কোনো কারণে অস্বস্তিকর অনুভূতি হলে অনেকেই কটন বাডের সাহায্যে কান পরিষ্কার করাটাকে তার যথার্থ সমাধান মনে করেন৷ কিন্তু এটি একটি ভুল ধারণা; বরং কটন বাড দিয়ে কান চুলকালে কানের সমস্যা হতে পারে৷ এ প্রসঙ্গে কথা বলেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাক-কান-গলা বিভাগের অধ্যাপক বেলায়েত হোসেন সিদ্দিকী৷ তিনি বলেন, প্রাকৃতিকভাবেই কানের নিজস্ব কিছু প্রক্রিয়া রয়েছে, যার মাধ্যমে কান পরিষ্কার হয়৷ তাই কোনো কারণে কানে কোনো সমস্যা হলেও কটন বাড দিয়ে কান পরিষ্কার করার কোনো প্রয়োজন নেই৷
যাই হোক, কটন বাড ব্যবহারে নিম্নোক্ত সাবধানতাগুলো অবলম্বন করা একান্ত জরুরীঃ-

* কয়েক দিন আগে খুলে রাখা প্যাকেট থেকে কটন বাড বের করে নিয়ে ব্যবহার করা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ৷ আমাদের দেশে আর্দ্রতার প্রভাবে প্যাকেট খুলে রাখা কটন বাডে ছত্রাক জন্মায়, সেটি কানে ব্যবহার করলে কানে ছত্রাকের সংক্রমণ হতে পারে৷

* কান পরিষ্কার করার সময় কোনো কারণে হঠাৎ চমকে উঠলে অসতর্কতাবশত কানে কটন বাডের আঘাত লাগতে পারে৷

* কটন বাড দিয়ে কান অহেতুক খোঁচাখুঁচির ফলে কানে আঘাত লাগতে পারে নিজের অজান্তেই, এমনকি ছিঁড়ে যেতে পারে কানের পর্দাও৷

* যদি কানের কোনো অসুখের কারণে কান চুলকায়, তাহলে কটন বাড ব্যবহারের কারণে অসুখের মাত্রা বেড়েও যেতে পারে৷
 
 
 চলবে....................................