Sunday, January 29, 2017

কানঃ সাধারণ অঙ্গটি নিয়ে অসাধারণ যতকথা। পার্টঃ ৪। #DrShahbubAlamTips

কানের সাধারণ সমস্যা ও তার প্রতিকারঃ

কানের সাধারণ সমস্যাগুলোর কারণ ও প্রতিকার জানা থাকলে খুব সহজেই এগুলো থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। নিম্নে কানের কিছু সাধারণ সমস্যা ও তার প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করা হলঃ-

১/ বহিঃকর্ণের প্রদাহ ও তার প্রতিকারঃ

কানের অন্যতম সাধারণ সমস্যা হলো বহিঃকর্ণে প্রদাহের সৃষ্টি হওয়া। যেকোনো বয়সেই এ সমস্যার উদ্ভব হতে পারে; তবে বাচ্চাদের এ সমস্যা বেশি হয়। মূলত কানে ময়লা জমে যাওয়া এবং সেটা নিয়মিত পরিষ্কার না করা হলে বহিঃকর্ণে প্রদাহ দেখা দেয়। কানের খৈল বা ওয়াক্সের সঙ্গে ধুলাবালি জমেও প্রদাহের সৃষ্টি হতে পারে। ময়লা পরিষ্কার করার জন্য অনেকেই কটনবাড ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু কটনবাডে লেগে থাকা ময়লা কানে প্রবেশ করেও কানে ইনফেকশন দেখা দিতে পারে। এ জন্য কটনবাডের পরিবর্তে অলিভ অয়েল ব্যবহার করে খৈল নরম করে নেওয়াই শ্রেয়। এতে কানের ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে।

২/ কান পাকা রোগ ও তার প্রতিকারঃ
 
বিভিন্ন কারণে কান পাকা বা কান পঁচা রোগ দেখা দিতে পারে। দুই ধরনের কান পঁচা রোগ আছে। একটি তুলনামূলক কম বিপজ্জনক, আরেকটি বেশি বিপজ্জনক। বেশি বিপজ্জনক কান পাকা রোগ দীর্ঘমেয়াদে আরো বড় সমস্যা করে এবং এ থেকে কখনো কখনো মৃত্যু ঘটাও অস্বাভাবিক নয়। পানি বা অন্য কিছুর কারণে কানের পর্দা ছিদ্র হয়ে গেলে কান পচা রোগ দেখা দেয়। এ ছাড়া আমাদের কানের ভেতরে অবস্থিত ছোট ছোট হাড় আছে। সেগুলো ক্ষয় হয়ে গেলেও এ সমস্যা হতে পারে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় মধ্যকর্ণে কলেস্টিটোমার উপস্থিতির কারণে। এটি এক ধরনের ক্ষতিকর অবাঞ্ছিত পাতলা আবরণ, যা মধ্যকর্ণে সৃষ্টি হয় এবং বাড়তে বাড়তে একসময় মস্তিষ্ক পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করে এবং পরবর্তী সময়ে রোগীর মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু ঠিক সময়ে অপারেশনের মাধ্যমে শ্রবণশক্তি ৭০-৮০ শতাংশ পর্যন্ত ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এ ছাড়া কম বিপজ্জনক কান পঁচা রোগ (কলেস্টিটোমার উপস্থিতি ব্যতীত) বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ওষুধের মাধ্যমে নিরাময় করা সম্ভব। বাংলাদেশে সব ধরণের কান পচা রোগের চিকিৎসা করা হয়; দেশের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। এ কারণে কানে কম শুনতে পেলে বা কান দিয়ে দুর্গন্ধ বের হলে সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত, কোনোভাবেই বিলম্ব করা ঠিক নয়।

৩/ ওটোস্ক্লেরেসিস ও তার প্রতিকারঃ
 
ওটোস্ক্লেরেসিস সমস্যাটা কম বয়সী মেয়েদের মধ্যে দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে কানের অভ্যন্তরে যে ছোট ছোট হাড় আছে, সেগুলোর জয়েন্ট শক্ত হয়ে যায়, নড়তে পারে না। ফলে শব্দ আর অন্তঃকর্ণ পর্যন্ত যেতে পারে না, তাই শুনতে সমস্যা হয়। এক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

৪/ শ্রবণশক্তি লোপ ও তার প্রতিকারঃ
 
কানের অভ্যন্তরে হিয়ারিং সেল নষ্ট হয়ে গেলে শ্রবণক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এটি বার্ধক্যজনিত কারণে হয়। কানে সঠিকভাবে শুনতে পাচ্ছেন কি না তা বোঝার জন্য নিজে নিজেই কয়েকটি পরীক্ষা করতে পারেন। এই যেমন, সবার সঙ্গে টিভিতে কোনো অনুষ্ঠান দেখতে বসে বারবার টিভির ভলিউম বাড়িয়ে দিতে বলছেন কি না কিংবা মিটিংয়ে একটু পেছনে বসে বক্তার আওয়াজ আপনার কানে ঠিকমতো এসে পেঁৗছাচ্ছে কি না ইত্যাদি। এভাবে নিজেই কানের অবস্থা সম্পর্কে সজাগ থাকতে পারবেন। সমস্যা শুরু হবার আগেই বুঝতে পারবেন।
শ্রবণশক্তি হ্রাস পেলে তা পুনরুদ্ধারের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের হিয়ারিং অ্যাইড (শ্রবণসহায়ক যন্ত্র) সফলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

৫/ কানের খৈল সমস্যা ও তার প্রতিকারঃ
 
কানে খৈল অতি পরিচিত সমস্যা। এ খৈল অনেকেই পরিষ্কার করার চেষ্টা করেন। নিজে এটি পরিষ্কার করা ঠিক নয়। নিজে পরিষ্কার করতে গেলে জমে থাকা খৈলের বেশীরভাগই ভেতরে চলে যায়। ফলে বিপত্তি আরো বাড়ে। কানে খৈল আটকে গেলে কানে ব্যথা হয়, কানে কম শোনা যায় কান বন্ধ থাকার কারণে ইএনটি স্পেশালিস্ট কান দেখে এটি পরিষ্কার করে দিতে পারেন। তবে পরিষ্কার করা সম্ভব না হলে খৈল গলানোর ওষুধ রয়েছে। তাতেও কাজ না হলে কিংবা অবস্থা বেশি খারাপ হলে অজ্ঞান করে কান পরিষ্কার করে দিতে হয়। যাদের কানে খোল হওয়ার প্রবণতা রয়েছে তারা নিয়মিত কানে ৪/৫ ফোঁটা করে অলিভ অয়েল দিতে পারেন।
 
 চলবে.....................

No comments:

Post a Comment